ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়া

 মাহফুজা আফরোজ সাথী : মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ হাজীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পশু কোরবানি করেন।

 

আসুন দেখি এই কোরবানির গো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী বা অপকারী হতে পারে।

 

কোরবানির গোশত (গরু/খাসি) মূলত রেড মিট। এগুলো সম্পূর্ণ প্রোটিন যা আমাদের প্রয়োজনীয় সব রকমের এমাইনো এসিড দেয় এবং আমাদের পেশি কলার গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

১০০ গ্রাম গোশতে আছে ২৫০ ক্যালরি, ১৫ গ্রাম ফ্যাট ও ২৬ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়াও এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষ করে ভিটামিন বি ১২, জিঙ্ক, আয়রন ও সেলেনিয়ামের অত্যন্ত ভালো উৎস।

 

রেড মিটের চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করলে এর কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়। তাই রান্নার আগে চর্বি কেটে ফেলে দিতে হবে।

 

এতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম উভয়ের পরিমাণই বেশি বলে হার্ট, হাইপ্রেসার, কিডনির রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মেপে গোশত খাওয়া জরুরি।

একবারে চর্বি ছাড়া ছোট টুকরার ৩-৪ টুকরা পর্যন্ত নেওয়া নিরাপদ।

 

যেহেতু প্রত্যেকের চাহিদা আলাদা তাই আপনার প্রয়োজনীয় পরিমাণ আপনার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিন।

 

রান্নায় অতিরিক্ত মশলার ব্যবহারের জন্য হজমে সমস্যা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মশলা এড়িয়ে চলুন।

 

কিডনি রোগ ও উচ্চরক্তচাপ থাকলে মাংসে বাড়তি সস  ঘি, বাটারের ব্যবহার এড়িয়ে রান্নায় সাধারণ তেল ব্যবহার করুন।

 

গোশত প্রধানত প্রোটিনের উৎস, কিন্তু কলিজা, মগজ, ভুঁড়ি মূলত কোলেস্টেরলের ঘনীভূত উৎস। তাই এই অংশগুলো অল্প পরিমাণে খাওয়াই উত্তম। যাদের লিপিড প্রোফাইল হাই তারা এসব অংশ এড়িয়ে যাবেন।

 

গোশত রান্না বা সাইড ডিশ হিসেবে সবজি বা সালাদ যুক্ত করলে এর ফাইবার কোলেস্টেরলের সঙ্গে বাইন্ড করে এর অনেকটা অংশ শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই প্রতি বেলায় সবজি বা সালাদ অন্তর্ভুক্ত রাখুন।

 

যারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা নিজেরাই অনেক নিয়ন্ত্রণের মাঝে গোশত খেয়ে থাকেন, তবে সুস্থ ব্যক্তিরা এ বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দেন না।

 

কিন্তু অতিরিক্ত রেড মিট ও অরগ্যান মিট (কলিজা, মগজ, ভুড়ি ইত্যাদি ) প্রেসার বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায়, রক্তনালীতে ব্লক তৈরি করতে পারে, কিছু ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই আপনি সুস্থ থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে রেড মিট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

রেড মিটের আঁশ মোটা হওয়াতে এটা সহজপাচ্য নয় এবং এই জাতীয় গোশত কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে তাই যাদের আগেই কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা অতিরিক্ত গোশত খাওয়া পরিহার করুন।

 

তবে যারা কম ওজনের আছেন বা প্রোটিন, আয়রন ইত্যাদির অভাবে ভুগছেন তারা কিন্তু নির্দ্বিধায় খেতে পারেন মজাদার এই রেড মিট।

 

ঈদুল আজহায় গরিব দুস্থ মানুষ গোশত পেয়ে থাকে যার ফলে তারা এই অত্যন্ত পুষ্টিকর প্রোটিনের উৎস পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রহণ করতে পারে। তাই আপনি কোরবানি করে থাকলে আপনার আশপাশের গরিব মানুষের মাঝে গোশত বিতরণ করে নেকি অর্জনের পাশাপাশি সুস্থ জাতি গঠনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।

 

আসুন পরিমিত পরিমাণে গোশত খেয়ে সুস্থ থাকি, ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকি।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ
ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড
চট্টগ্রাম                                 
সূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» গুমের সঙ্গে জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : সেনা সদর

» আশুরা-তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে ডিএমপির একগুচ্ছ পরামর্শ

» স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী!

» যুবককে গলা কেটে হত্যা, প্রধান আসামি গ্রেফতার

» স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ১৯ হাজার ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট দিল চীন

» পেন্টাগনের মূল্যায়ন: কতোটা ক্ষতি হলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির?

» সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নতুন নির্দেশনা মাউশির

» ইতালির নাগরিক তাবেলা হত্যা: ৩ জনের যাবজ্জীবন, ৪ জন খালাস

» টেলিকম নীতিমালায় সরকারের তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে বিএনপির উদ্বেগ

» এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ছুরিকাঘাত করে ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাই

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

ঈদের দিনের খাওয়া-দাওয়া

 মাহফুজা আফরোজ সাথী : মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। সমগ্র মুসলিম উম্মাহ হাজীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পশু কোরবানি করেন।

 

আসুন দেখি এই কোরবানির গো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী বা অপকারী হতে পারে।

 

কোরবানির গোশত (গরু/খাসি) মূলত রেড মিট। এগুলো সম্পূর্ণ প্রোটিন যা আমাদের প্রয়োজনীয় সব রকমের এমাইনো এসিড দেয় এবং আমাদের পেশি কলার গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

১০০ গ্রাম গোশতে আছে ২৫০ ক্যালরি, ১৫ গ্রাম ফ্যাট ও ২৬ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়াও এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বিশেষ করে ভিটামিন বি ১২, জিঙ্ক, আয়রন ও সেলেনিয়ামের অত্যন্ত ভালো উৎস।

 

রেড মিটের চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করলে এর কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকখানি কমিয়ে আনা যায়। তাই রান্নার আগে চর্বি কেটে ফেলে দিতে হবে।

 

এতে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম উভয়ের পরিমাণই বেশি বলে হার্ট, হাইপ্রেসার, কিডনির রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ মেপে গোশত খাওয়া জরুরি।

একবারে চর্বি ছাড়া ছোট টুকরার ৩-৪ টুকরা পর্যন্ত নেওয়া নিরাপদ।

 

যেহেতু প্রত্যেকের চাহিদা আলাদা তাই আপনার প্রয়োজনীয় পরিমাণ আপনার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিন।

 

রান্নায় অতিরিক্ত মশলার ব্যবহারের জন্য হজমে সমস্যা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মশলা এড়িয়ে চলুন।

 

কিডনি রোগ ও উচ্চরক্তচাপ থাকলে মাংসে বাড়তি সস  ঘি, বাটারের ব্যবহার এড়িয়ে রান্নায় সাধারণ তেল ব্যবহার করুন।

 

গোশত প্রধানত প্রোটিনের উৎস, কিন্তু কলিজা, মগজ, ভুঁড়ি মূলত কোলেস্টেরলের ঘনীভূত উৎস। তাই এই অংশগুলো অল্প পরিমাণে খাওয়াই উত্তম। যাদের লিপিড প্রোফাইল হাই তারা এসব অংশ এড়িয়ে যাবেন।

 

গোশত রান্না বা সাইড ডিশ হিসেবে সবজি বা সালাদ যুক্ত করলে এর ফাইবার কোলেস্টেরলের সঙ্গে বাইন্ড করে এর অনেকটা অংশ শরীর থেকে বের করে দেয়। তাই প্রতি বেলায় সবজি বা সালাদ অন্তর্ভুক্ত রাখুন।

 

যারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা নিজেরাই অনেক নিয়ন্ত্রণের মাঝে গোশত খেয়ে থাকেন, তবে সুস্থ ব্যক্তিরা এ বিষয়টি ততটা গুরুত্ব দেন না।

 

কিন্তু অতিরিক্ত রেড মিট ও অরগ্যান মিট (কলিজা, মগজ, ভুড়ি ইত্যাদি ) প্রেসার বাড়িয়ে দেয়, ওজন বাড়ায়, রক্তনালীতে ব্লক তৈরি করতে পারে, কিছু ক্যান্সার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাই আপনি সুস্থ থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে রেড মিট গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

রেড মিটের আঁশ মোটা হওয়াতে এটা সহজপাচ্য নয় এবং এই জাতীয় গোশত কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে তাই যাদের আগেই কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা অতিরিক্ত গোশত খাওয়া পরিহার করুন।

 

তবে যারা কম ওজনের আছেন বা প্রোটিন, আয়রন ইত্যাদির অভাবে ভুগছেন তারা কিন্তু নির্দ্বিধায় খেতে পারেন মজাদার এই রেড মিট।

 

ঈদুল আজহায় গরিব দুস্থ মানুষ গোশত পেয়ে থাকে যার ফলে তারা এই অত্যন্ত পুষ্টিকর প্রোটিনের উৎস পরিবারের সবাইকে নিয়ে গ্রহণ করতে পারে। তাই আপনি কোরবানি করে থাকলে আপনার আশপাশের গরিব মানুষের মাঝে গোশত বিতরণ করে নেকি অর্জনের পাশাপাশি সুস্থ জাতি গঠনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন।

 

আসুন পরিমিত পরিমাণে গোশত খেয়ে সুস্থ থাকি, ঈদে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো থাকি।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ
ইমপেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেড
চট্টগ্রাম                                 
সূএ:  বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com